শাহজাহানের পুত্র আওরঙ্গজেবের আদেশে ধ্বংস করা হয়েছিল কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির



ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম প্রসারের ইতিহাস  (পর্ব-১৩)
(আগের পর্বটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন)


শাহজাহানের পুত্র আওরঙ্গজেব ক্ষমতায় বসেই হিন্দু নির্যাতনের জন্য আরও কঠোর নীতি ঘোষনা করলেন। তিনি জিজিয়া কর পুনঃ প্রবর্তন করলেন। উদয়পুর ও চিতোর অধিকার করে দুই'শ এর অধিক দেব মন্দির ধ্বংস করলেন। শিখ গুরু তেগ বাহাদুর আওরঙ্গজেবের হিন্দু বিরোদী নীতি অমান্য করেন এবং কাশ্মীরের ব্রাম্মনদের আওরঙ্গজেব প্রবর্তিত হিন্দু বিরোধী নীতি অমান্য করতে উপদেশ দেন। এ জন্য আওরঙ্গজেবের সম্মূখে উপস্থিত করা হল এবং মৃত্যুভয় দেখিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বলা হলে তিনি ধর্ম ত্যাগ অপেক্ষা মৃত্যুই শ্রেয় বিবেচনা করলেন। সম্রাটের আদেশে ততক্ষনাত তাকে হত্যা করা হল। পাঞ্জাবের বর্তমান পাতিয়ালা ও মেওয়াট অঞ্চলে 'সৎনামী' হিন্দু সম্প্রদায়ের বাস ছিল। একজন মুসলমান সৈন্য একজন সৎনামী ভক্তকে হত্যা করলে সৎনামীরা বিদ্রহী হয়, ফলে আওরঙ্গজেবের বাহিনী সৎনামী হিন্দুদের প্রায় সকলকে হত্যা করেন।

আরঙ্গজেবের সমসাময়িক মুসলমান লিপিকার সাকি মুস্তাইদ খা লিখেছেন, "১০৭৯ হিজরী ১৭ই জিলকদ (১৮এপ্রিল, ১৬৬৯) সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাছে খবর পৌছালো যে, থাট্টা সুলতান বিশেষ করে বারানসীর মুর্খ ব্রাম্মনরা তাদের মোটা মোটা ছেড়া গ্রন্থ থেক কি সব জংলী তত্ব ছাত্রদের শিক্ষা দিচ্ছে। কাফের হিন্দুদের সঙ্গে কিছু মুসলমান ছাত্র ও সেখানে এসব ছাই ভস্ম শিখতে যাচ্ছে। এমনকি বহু দূর দেশ থেকেও বহু ছাত্র ওসব ডাকিনী বিদ্যা শিখতে বারানসীতে উপস্থিত হচ্ছে। এ খবর শোনা মাত্র ধর্মের দিক নির্দেশকারী সম্রাট এক হুকুম জারী করে বললেন, সমস্ত প্রদেশের শাসনকর্তারা যেন স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ভাবে কাফেরদের মন্দির ও বিদ্যালয়সমূহ ধ্বংস করে দেন। এই মর্মে তাদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে যে, তারা যেন মূর্তি পূজা এবং এই ধরনের শিক্ষা কেন্দ্রগুলোকে চিরকালের জন্য স্তব্ধ করে দেন। পরবর্তী রবিউল আউয়াল মাসের ১৫ তারিখে সম্রাটের কাছে  খবর এলো যে , সম্রাটের আজ্ঞানুসারে সরকারী কর্ম কর্তারা বেনারসের বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংস করেছে।"
[Elliot & Dowson, VII-183-184]

সাকি মুস্তাইদ খা আরও লিখেছেন, "১০৮০ হিজরীর রমজান মাসে (ডিসেম্বর, ১৬৬৯ খৃ) সম্রাটের রাজত্বকালের ত্রয়োদশ বছরে অত্যাচারীদের (হিন্দুদের) অবিচল শত্রু ও ন্যায় বিচারের অনুরাগী সম্রাট (আরঙ্গজেব) ডেরা বসুরায় নামে পরিচিত মথুরার হিন্দু মন্দিরট ধ্বংস করতে আদেশ দিলে অনতিবিলম্বে মেকী ধর্মের সুদৃঢ় ঘাটি মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হল। ঠিক সেই জায়গাতেই বহু টাকা ব্যয় করে এক বিশাল মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করা হল।




এখানে লক্ষ করার বিষয় হল আজও মথুরায় গেলে দেখা যাবে যে, সাবেক মন্দিরের ধ্বংস বা ধূলিস্যাত করা হয়নি; শুধু তাকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়েছে মাত্র। ঠিক তেমনি পূর্ববর্তী বিবরণে কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে; ক্কিন্তু আজও কাশীতে গেলে দেখা যায় যে, ধ্বংস করার নামে তাকে শুধু মসজিদে  রূপান্তরিত করা হয়েছে মাত্র। এসব ঘটনা ও তার বিবরণ থেকে এই সিন্ধান্তেই আসতে হয় যে, এই সব বিবরনে যেখানেই মন্দির ধ্বংস করার কথা আছে, সে সমস্ত ক্ষেত্রেই মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তর বুঝতে হবে। এটিই নিয়ম, কেননা হজরত মোহাম্মদ মক্কার কেবলেস্বর মন্দিরকে ধূলিস্যাত করেননি, শুধু মূর্তিগুলো ভেঙ্গে দিয়ে এবং ছবিগুলোকে ফেলে দিয়ে কাবা শরীফ নামকরন করেছেন। এটি একটি সুন্নত। এই সুন্নত অনুসরন করা মুসলমান শাসকের নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাড়ড়িয়েছিল। হিন্দু জনসাধারনকে বাধ্যতামূলকভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করিয়ে তাদেরই মন্দিরকে ঘসে মেজে হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তিগুলোকে ধ্বংস করে মসজিদের রূপ দিয়ে নও মুসলমানের সেখানে নামাজ শিক্ষা দেওয়া ও পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। 



"যদি কোনো গবেষক উপরোক্ত তথ্যাবলীর মধ্যে একটিও ভূল বলে প্রমান করতে পারেনতাহলে আমরা তার কাছে চিরদিনের জন্য কৃতজ্ঞ থাকব।"


শেয়ার করতে নিচের সোসাল আইকনগুলোতে ক্লিক করুন

No comments

Powered by Blogger.