৩ টি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তর করা হত
ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম প্রসারের ইতিহাস (পর্ব-১৪)
(আগের পর্বটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন)
এক
কালে আজকের করাচির নাম ছিল দেবল বা দেবালয়। কারন, যেখানে সুমুদ্রের পাড়ে
ছিল বিশাল একটি মন্দির । সমুদ্রের অনেক দূর থেকে এই মন্দিরের চূড়া দেখা যেত।
মহাম্মদ বিন কাশিম ৭১২ খ্রষ্টাব্দে সেই মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তির করে উপমহাদেশে
এই বর্বর কাজের সূত্রপাত
করেন। সেই সময়কার মুসলমান ঐতিহাসিকরা এই দানবীয় কাজকে মেকি দেব-দেবীর
বিরুদ্ধে মহান আল্লাহর মহান বিজয় বলে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।
ইসলামী
চিন্তাবিদের মতে মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তর করা খুব সোজা এবং তিনটি প্রক্রিয়ার মধ্য
দিয়ে এই কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব । প্রথমত, মন্দিরের বিগ্রহগুলোকে ভেঙে ফেলতে
হবে। দ্বিতীয়ত, আজান দেবার জন্য একটি মিনার তৈরী করতে হবে এবং শেষ খুতবা দেবার
জন্য মিনার বানাতে হবে। কত কম সময়ের মধ্যে এই কর্ম সমাধান করা সম্ভব আজমীরের 'আড়াই
দিন কা ঝোপড়া' তার স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে। বিগত
১০০০ বছরে লক্ষ লক্ষ মন্দির মুসলমানেরা ভেঙে ধূলিসাত করেছে; নয়তো মসজিদে
রূপান্তর করেছে এমনি উপায়ে। সুলতান মাহমুদ সোমনাথের সুদ্ৃশ্য মন্দির ধ্বংস করেছে।
বাবরের দ্বারা অযোধ্যার রাম মন্দির, আওরঙ্গজেবের দ্বারাকাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরা ও
মথুরার কেশব মন্দির ভাঙা ও মসজিদে রূপান্তর করা
এর অন্যতম উদাহারণ। হজরত মহাম্মদই প্রথম এই পথ দেখিয়ছেন। তার আদর্শ অনুসরণে
আজ পর্যন্ত এ কাজ চলছে তো চলছেই।
ঢাকার
ওয়ারী এলাকার শিব-মন্দির ভেঙে ইসলামী বিদ্যালয়, বানিয়া নগরের সীতানাথ মন্দির,
ক্যাপিট্যাল ঈদ্গা ময়দান, টিকাটুলীর শিব মন্দির, রাজধানী মার্কেট ও মসজিদ, টিপু
সুলতান রোদের রাধ-কৃষ্ণের মন্দির হয়েছে মানিকগঞ্জ হাউজ।
সাকি
মুস্তাইদ খার বিবরণ অনুসারে বুন্দেলখন্ডের রাজা নরসিং দেব যুবরাজ সেলিমকে নানাভাবে
সাহায্য করার পুরুষ্কার হিসেবে মথুরায় মন্দির নির্মান করার অনুমতি লাভ করেন এবং ৩৩
লক্ষ টাকা ব্যয় করে ঐ বিশাল মন্দির নির্মান করেন। আওরঙ্গজেবের আদেশে সেই মন্দিরকে
ভেঙ্গে মসজিদ তৈরী করা হয়। এই সংবাদে উল্লেসিত মুস্তাইদ খা লিখেছেন,
ইনসাল্লা, ভাগ্যগুনে আমরা ইসলামকে দ্বীন হিসাবে পেয়েছি।
যে কর্ম সমাধা করা নিতান্ত দুঃসাধ্য ছিল, মেকি দেব দেবীর উপাসনালয় ধ্বংসকারী এই
সম্রাটের রাজত্বে তাও সম্ভব হল। সত্য ধর্মের প্রতি (সম্রাটের) এই বিপুল সমর্থন
উদ্ধত হিন্দু রাজাদের চরম আঘাত হানলো পুতুল দেবতার মত তারাও তাদের ভয়ার্ত মুখ
দেয়ালের দিকে ফিরিয়ে রাখলো।
মন্দির
তো ভাঙা হল। কিন্তু মন্দিরের বিগ্রহের কি হবে ? সে ব্যপারে সাকি মুস্তাইদ খা
লিখেছেন, "জংলী সেই সব মন্দির থেকে মূল্যবান
রত্নখচিত সেই সব বিগ্রহ পাওয়া গেল সেগুলোকে আগ্রায় নিয়ে আসা হল এবং সেখানে নবাব
বেগম সাহেবার মসজিদের সিড়ির নীচে ফেলে রাখা হল; যাতে সত্য ধর্মে বিশ্বসীরা (মসজিদে
যাওয়ার আসার সময়) সেগুলোকে চিরকাল পায়ের তলায় মাড়িয়ে যেতে পারে।"
সাকি
মুস্তাইদ খা আরও লিখেছেন-
"রবিউল আখির মাসের ২৪ তারিখে খাঞ্জাহান বাহাদুর
কয়েক গাড়ী হিন্দু বিগ্রহ নিয়ে যোধপুর ফেরলেন। সেখানকার অনেক মন্দির ভেঙে এ সব
বিগ্রহ সংগ্রহ করা হয়েছিল। এই কাজের জন্য মহামান্য সম্রাট তাকে খুবই প্রশংসা
করলেন। এই সব বিগ্রহের বেশীর ভাগই মূল্যন সোনা, রূপা, পিতল, তামা বা পাঠরের তৈরী
ছিল। সম্রাটের হুকুম হল কিছু বিগ্রহ জঞ্জাল হিসেবে এখানে সেখানে ফেলে রাখতে যাতে
বিশ্বাসীরা মসজিদে যাতায়তের সময় সেগুলোকে মাড়াতে পারে।"
পরে
পাথরের মূর্তি গুলোকে ভেঙে খোয়া করা হয় এবং সেই খোয়া দিয়ে জাম-ই-মসজিদের চাতাল
মোজাইক কয়া হয়; যাতে নামাজীরা এসব বিগ্রহকে মাড়িয়ে নামাজ পড়ে আল্লার নাম রোশন করতে
পারে।
কাশীর
বিখ্যাত বিশ্বনাথ মন্দির এবং ১৬৭০ খৃষ্টাব্দে মথুরার বিখ্যাত কেশব রায় মন্দির
ধ্বংস করা হল। এই সংবাদ বিদ্যুতবেগে সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে পড়ল। উল্লেখিত উভয় মন্দিরের
জায়গাতেই বিশাল দুই মসজিদ খাড়া করা হল যা আজও সেখানে দাঁড়িয়ে আছে এবং যে কেউ কাশী
বা মথুরা ভ্রমনে গেলে অনেক দূর থেকেই তা দেখতে পাবেন
[R.C.Majumder, BVB. Vol.VII,p-265]
ঐতিহাসিক
এ কে মজুমদার লিখেছেন, "মেঘ যেমন পৃথিবীর জল বর্ষণ করে ঔরঙ্গজেব সেই রকম
সমস্ত দেশ জুড়ে বর্বরতা বর্ষন করলেন।"
মধ্য
যুগে ভারতে হিন্দু প্রজা পীড়নকারী মুসলমান শাসন বর্ণনা করতে গিয়ে ঐতিহাসিক ইলিয়ট
বলেছেন, "আমরা অবাক হব না যদি দেখি যে এই সব অত্যাচারী শাসকদের আমলে ন্যায়
বিচার কলুষিত ও পক্ষপাত দুষ্ট অথবা যদি দেখি যে, অকথ্য নির্যাতন ও অত্যাচারের মধ্য
দিয়ে সর্বত্র রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে। গ্রামবাসীদের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে
বা তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশেষ ভাবে পুরুষের পুরুষাঙ্গ ও মহিলাদের স্তন কেটে ফেলা
হচ্ছে অথবা যদি দেখি, যে সব রাজকর্মচারীকে রক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারাই
দূবৃর্ত্ত, ডাকাতের সর্দার বা উচ্ছেদকারী হানাদার রূপে অত্মপ্রকাশ করেছে।"
জালালউদ্দিন
সিংহাসনে আরোহণ করে সূবর্ণ গ্রাম থেকে শেখ জহিরকে নিয়ে এসে তার উপদেশ অনুসারে
রাজকার্য পরিচালনা শুরু করেন। তিনি পূর্ববঙ্গে ইসলাম ধর্ম বিস্তারের জন্য ঘোষণা
করলেন যে, সকলকে মুসলমান হতে হবে নয়তো প্রাণ দিতে হবে। এই ঘোষনার পরে পূর্ববঙ্গের
অনেকে কামরূপ আসাম ও কাছারের জঙ্গলে পালিয়ে যান। কিন্তু তথাকথিত নিন্মবর্ণের অনেক
হিন্দুই ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে। ঐতিহাসিক রজনীকান্ত চক্রবর্তীর মতে, জালালউদ্দিনের
ইসলাম ধর্ম প্রচারের ফলেই পূর্ব বাংলায় মুসলমানের সংখ্যা এত বেশী। (গৌড়ের ইতিহাস,
রজনীকান্ত চক্রবর্তী, পৃ-৪৫-৪৬)
কিন্তু
আমাদের ঐতিহাসিকরা এইসব বিষয়গুলি সযত্নে এড়িয়ে চলেন। তাদের মূল দিক নির্দেশই হল
বিদেশীমুসলমান শাসকদের মহান করে দেখাও, মুসলমান শাসনের যুগকে পরাধীনতার যুগ বলে
কখনো দেখিও না বরং ভারতের ইতিহাসের স্বর্ণ যুগ হিসেবে দেখাও। ঐসব মুসলমান শাসকরা
হিন্দুদের উপর যে নারকীয় অত্যাচার করেছে কোটি কোটি হিন্দুর রক্তে ভারতবর্ষের মাটি
কর্দমাক্ত করেছে। হিন্দুর ছিন্ন মুন্ড দিয়ে যে পাহাড় তৈরী করেছে তা ইতিহাসের বই
থেকে লোপাট করে দাও। তারা লক্ষ লক্ষ হিন্দু মন্দিরকে ধ্বংস করেছে বা মসজিদে
রূপান্তরিত করেছে তা ইতিহাসের বই থেকে সম্পূর্ণ মুছে দাও। এই নীতি অনুসরণের কারণ
সম্পর্কে ঐতিহাসিকগন বলেন এর ফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা হবে। বলা বাহুল্য
এই নীতি অনুসরণ করে আমাদের প্রকৃত ইতিহাস জানতে না গিয়ে ঐতিহাসিকগণ জাতির প্রতি
বিশ্বাসঘাতকতা ও যে জগন্য অপরাধ করে চলেছেন তা ক্ষমার অযোগ্য।
"যদি কোনো গবেষক উপরোক্ত তথ্যাবলীর মধ্যে একটিও ভূল বলে প্রমান করতে পারেন, তাহলে আমরা তার কাছে চিরদিনের জন্য কৃতজ্ঞ থাকব।"
শেয়ার করতে নিচের সোসাল আইকনগুলোতে ক্লিক করুন
No comments
Post a Comment