রাজকুমারী বিদ্যুন্মালার গল্প




"তুঙ্গভদ্রার তীরে"

কাহিনীর পটভূমিকা যে সময়ের তখন যাতায়াত ব্যবসা বাণিজ্যে নদী পথের একটা বিশাল ভূমিকা ছিল। ১৩৫২ শকাব্দে পূর্ব বাংলা থেকে দক্ষিণে তামিল দেশ পর্যন্ত যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যমই ছিল জলপথ । বৈশাখ মাসের দুপুর, কৃষ্ণা আর তুঙ্গাভদ্রা নদীর সঙ্গমস্থল থেকে দূরে তিনটে বড় নৌকো উজানে চলেছে। সঙ্গম পার করে তারা বা দিকে তুঙ্গাভদ্রায় ডুকবে। গন্তব্য সত্তর ক্রোশ দূরের বিজয়নগর। প্রথম নৌকো টি ময়ূরপক্ষী, আকারে বিশাল, ময়ূরের মত গাড় নীল ও সবুজ রঙ, পালেও নীল সবুজের অদ্ভুদ নকশা। তাতে রয়েছেন দুই রাজকুমারী ও রাজ পরিবারের লোকেরা। দ্বিতীয় নৌকাটি মকরমুখী, আকারে প্রথমের চেয়ে খানিক ছোট, দূসর রঙের বৈচিত্রহীন । এই নৌকায় রয়েছে ৩০ জন নৌ যুদ্ধা, রান্নার ঠাকুর, নাপিত আর চাকর বাকরের দল। তিন নম্বর নৌকায় আছে প্রচুর খাবার দাবার, চাল, ডাল, ঘি, গম, তেল, নুন, হলুদ ইত্যাদি। এতগুলো লোকের এত দিনের সফরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। সূর্য এখন মাঝ গগনে, ময়ুরপক্ষীর ছাদে বসে আছেন কলিঙ্গের দুই রাজকুমারী- বিদ্যুন্মালা ও মনি কঙ্কনা। কলিঙ্গের মহারাজা এদের পিতা হলেও মা আলাদা। বিদ্যুন্মালার মা রুক্ষ্মিনী দেবী ছিলেন আর্য এবং মনি কঙ্কনার মা সম্পা দেবী ছিলেন অনার্য বংশের।

বিজয়নগর দাক্ষিণাত্তের এক শক্তিশালী হিন্দু রাজ্য, আর সেই বিজয় নগরের রাজা হলেন দেবরায়। দেবরায়ের বয়স বর্তমানে ৩৫, তার দেহ যেমন দৃঢ় চরিত্রও তেমনি বজ্র কঠিন। অসম্ভব বিচক্ষণ, অসাধারণ শাষক ও রণ-পণ্ডিত। কৃষ্ণা নদীর দক্ষিণে ক্রমবর্ধমান বিদেশী শক্তির (মুসলিম আক্রমন) গতি রোধ করতে হলে সঙ্গবদ্ধ হওয়া যে একান্ত প্রয়োজন তা তিনি রাজ্য শাষনের শুরুতেই বুঝে গিয়েছিলেন। তাই প্রথমে আশে-পাশের হিন্দু রাজ্যগুলির একটি করে রাজকন্যা বিয়ে করে তাদের সাথে সন্ধী স্থাপন করেন। সকলেই যে সেচ্ছায় রাজি হলেন এমনটা নয়, কারো কারো উপর বল-প্রয়োগও করতে হল। তার মধ্য অন্যতম এই কলিঙ্গ রাজ্য।
এক প্রস্থ যুদ্ধের পর কলিঙ্গরাজ "ভানুবেগ" পরাজিত হন। শান্তি ভিক্ষা করলে শর্ত হিসেবে তার কন্যা বিদ্যুন্মালাকে দেবরায়ের হাতে সমর্পন করার প্রস্তাব মেনে নিতে হয়। দেবরায় রাজ্য ছেড়ে যেতে পারবেন না শত্রুপক্ষের আক্রমনের আশংকায়, তাই ঠিক হয় রাজকন্যাকেই বিজয় নগর পাঠাতে হবে। সেখানেই হবে বিয়ের অনুষ্ঠান। স্থলপথ দূর্গম তাই জলপথেই যাত্রা।

১৩০০ শকাব্দে ভারতবর্ষের অনেক অঞ্চল আরব থেকে আসা অত্যাচারী মুসলমান রাজাদের দখলে চলে গেছে। আর এই সব যবন রাজাদের অত্যাচারে টিকতে না পেরে অনেকেই হিন্দু রাজাদের অঞ্চলে পালিয়ে যেতে শুরু করেছিলো,  ইতিহাস থেকে দেখা যায় গত প্রায় এক হাজার বছর ধরেই হিন্দুরা মুসলমানদের ভয়ে সমস্ত ভারতের এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে ছুটে বিড়িয়েছে, ঠিক যেমন এখন বাংলাদেশ থেকে ভারতে ছুটে যাচ্ছে।  ২০ বছরের যুবক অর্জুন বর্মা মুসলিম অত্যাচারে নিজ রাজ্য চেয়ে হিন্দু রাজ্য বিজয়নগরের সেনা বাহিনীতে যোগ দিতে রওনা করেছে। বাংলাদেশের থেকে আসা বলরাম কর্মকার, যার বউকে মুসলিম সৈন্যরা ধরে নিয়ে গেছে তার সাথে দেখা হয় অর্জুন বর্মার।

প্রায় সমস্ত ভারতবর্ষ যখন মুসলিম রাজাদের দখলে চলে যাচ্ছে তখন শেষ রক্ষার জন্য কি প্রাণ পণ লড়াই করেছিলেন হিন্দুরা।
এই গল্পের অর্জন বর্মা, বলরাম কর্মকার হয়তো কাল্পনিক চরিত্র কিন্তু এরকম কত অর্জুন, বলরামরা লড়াই করেছিলো, প্রাণ দিয়েছিলো তা ইতিহাসে চোখ ফেরালেই দেখা যায়।
যে সকল মুসলমান আজ মুসলিম পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন তাদের জানা উচিত তাদের পূর্ব পুরুষদের প্রতি হওয়া এমন নিষ্ঠুরতার কথা, তাদের বোঝা উচিত তাদের পূর্বপুরুষেরা কেউ সেচ্ছায় ইসলাম গ্রহন করেনি, কত অত্যাচারে প্রাণভয়ে ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছিলো।
যে বলরামের স্ত্রীকে মুসলিম সৈন্যরা ধরে নিয়ে গিয়েছিলো নিশ্চয় কোন মুসলিম সৈন্য বা শাষক তাকে ধর্ষণ করেছিলো, নিশ্চয় তার গর্বে জন্ম নিয়েছিলো ৮-১০ টা মুসলিম সন্তান। আজকের মুসলমানরা সেই তাদের ই সন্তান। এমন কত হিন্দু মেয়ে বৌ কে ওই সব অত্যাচারী মুসলিম শাষকরা অপহরন করে নিয়ে বিয়ে বা ধর্ষণ করেছিলো এবং মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি করেছিলো তার হিসেব নেই। তাই আজ যারা নিজেকে মুসলিম বলতে গর্ববোধ করে তাদের উচিত সঠিক ইতিহাস টা জানা এবং পূর্ব পুরুষদের উপর হওয়া অত্যাচারের কালিমা মুছে দিয়ে ইসলাম পরিত্যাগ করা।

র্তমান তুঙ্গভদ্রা নদী


শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় এর লেখা এই ঐতিহাসিক উপন্যস 'তুঙ্গো ভদ্রার তীরে" এর অসাধারণ রেডিও রূপান্তর করেছে রেডিও-মিরচি। এই গল্পটির জন্য শরবিন্দু বন্দ্যপাদ্যায় ১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে রবীন্দ্র পুরুষ্কার পান।



৩ পর্বের এই রেডিও নাট্য টি  নিচের লিংক থেকে ডাউনলোড করে  শুনতে পারেন। ভাল লাগবে নিশ্চয়তা দিলাম।


যাদের ডাটা কম আছে তারা লো-কোয়ালিটি ফাইল ডাউনলোড করতে পারেন এখান থেকে-

Download Tungabhadrar Teerey লেখা তে ক্লিক করুন



ডাউনলোড করতে কোন সমস্যা হলে দয়া করে আমাদের ফেইসবুক ফেইজে মেসেজ দিয়ে জানাবেন ।

আমাদের ফেইসবুক ফেইজ - মুখ ও মুখোশ



পরের পোষ্টের জন্য চোখ রাখুন এই সাইটে এবং পেইজে লাইক দিয়ে রাখুন। শেয়ার করে সবাইকে জানার সুযোগ করে দিন
Powered by Blogger.