মক্কাবাসীরা কি সেচ্ছায় ইসলাম গ্রহন করেছিলো ??



ইসলাম প্রসারের ইতিহাস  (পর্ব-২২)


হজরত মুহাম্মদ মক্কা জয়ের (জানুয়ারী, ৬৩০খ্ৃ) আগে আরব দেশে ইসলাম প্রচারের জন্য ব্যপক উদ্যোগ নেননি। তিনি ঐ সময় মদিনার মোহাদির ও আনসার গোষ্টী মিলিয়ে সে যুগের ছোট আকারের মুসলমান সমাজেকে সংহত করে বিভিন্ন আরব ও ইহুদি গোষ্টির বিরুদ্ধে অবিরাম হানা যুদ্ধ আর পুর্ণাজ্ঞ যুদ্ধ চালিয়ে শক্তি সঞ্চয় করতেই ব্যস্ত ছিলেন। পূর্ণ শক্তির মূহুর্তে তিনি দশ হাজার সৈন্য নিয়ে অতর্কিতে মক্কায় ঝাপিয়ে পড়েন এবং বিনা রক্তপাতেই তিনি মক্কা জয় করেন। মক্কাবাসীরা বিপদে পড়ে ও মৃত্যুর ভয়ে ইসলাম গ্রহন করে।
তাদের নেতা আবু সুফিয়ান হযরতের সাথে অলিখিত চুক্তির শর্ত মেনে বাধ্য হন ইসলাম গ্রহন করতে। স্যার উইলিয়াম মূর এই অলিখিত বোঝা-পড়ার বিবরণ দিয়েছেন এই ভাবে, 'বিশাল বাহিনী সমেত পয়গম্বরের মক্কা অভিযানের খবর পেয়ে আগের দিন সন্ধ্যাবেলা আবু সুফিয়ান মদিনার পথ ধরে তার সঙ্গে দেখা করতে আগ্রসর হন। পথে পয়গম্বরের চাচা আল আব্বাসের সঙ্গে তার দেখা হয়। আব্বাস আকে পয়গম্বরের কাছে নিয়ে যান। হযরত তাকে বলেন, "কাল সকালে আমাদের সঙ্গে দেখা করবে।"
সকাল বেলা আব্বাসের সঙ্গে সুফিয়ান নত শিরে পয়গম্বরের শিবিরে উপস্থিত হন।

মূরের ভাষায়,--
"(কোরেশ নেতা যখন কাছে এলেন) পয়গম্বর তীব্রস্বরে বলে উঠলেন; "ধিক তোমাকে আবু সুফিয়ান, তুমি কি আজও বোঝনি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই?" উত্তরে আবু সুইয়ান বলেন, "হে মান্যবর, আর কোন উপাস্য যদি থাকতেন, তাবে তিনি যথার্থ আমার কোন কাজে আসতেন।" নবীজী বললেন, তবে তুমি মানছো যে , আমি আমার প্রভূর রসুল ? সুফিয়ান , "হে মান্যবর, এ নিয়ে আমার এখনো একটু আধটু দ্বিধা দ্বন্ধ আছে"
একথা শুনে আব্বাস চেচিয়ে উঠলেন "কি আপদ এটা দ্বিধা দ্বন্দের সময় নয়। এই মুহূর্তে ইসলামের কলেমায় বিশ্বাস কর আর সাক্ষ্য দাও, তা না হলে বিপদ হবে তোমার গর্দানের।"
এই বিবরণ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় আবু সুফিয়ান গর্দানের ভয়েই ইসলাম গ্রহণ করেন এবং পরের দিনা বেশীর ভাগ কোরেশই তার অনুসরণ করে।
হযরত মুহাম্মদ কেন কোরেশদের ইসলামে দীক্ষিত হতে বাধ্য করলেন? কারণ এটি কোরানের বানী। আল্লাহ বলেছেন, প্ৃথিবী থেকে পৌত্তালিদের উতখাত করে সারা বিশ্বে আল্লার ধর্ম প্রতিষ্টা করাই মুসলমানের পরম কর্তব্য। (কো-৮/৩৯)

এটিই আল্লাহর পথে শ্রেষ্ট কর্মোদ্যম, এটিই আদি ও অকৃত্রিম জেহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। যদি তারা ইসলাম গ্রহণ না করত তাহলে তাদের কি করা হত ? মধ্য যুগের বিখ্যাত ওলেমা কাজী মুগিসউদ্দিন সুলতান আলাউদ্দিনের নিকট এই রকম একটি প্রশ্নের সমাধান চেয়েছিলেন। উত্তরে মুগিসউদ্দিন বলেছেন,---
"আল্লাহতালা ইহাদিগকে অসম্মানজনক অবস্থার মধ্যে রাখা ধার্মিকতার অংশ বলিয়া গণ্য করেন। কারন ইহারা হজরত মুহাম্মদ মোস্তফার ধর্মের সর্বাপক্ষা মারাক্তক শত্রু। এই জন্য হজরত ইহাদিগকে হত্যা করা, ইহাদের ধন সম্পদ লুঠ করা এবং ইহাদিগকে দাস-দাসী হিসাবে গ্রহন করিবার আদেশ দিয়াছেন। আমরা যে ইমামের মাযাহাব মানিয়া চলি, সেই ইমাম আজম আবু হানিফাই শুধু ইহাদিগকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করা অথবা ইহাদিগকে মারিয়া কাটিয়া ধন সম্পদ লুট করিয়া দাস দাসী হিসাবে গ্রহণ করিবার কথা বলিয়াছেন। অন্যান্য ইমাম ও জ্ঞানী ব্যক্তিরা ইহাদের জন্য দুইটি পন্থা নির্দেশ করিয়াছেন, হয় তাহারা ইসলাম ধর্ম গ্রহন করিবে, নতুবা তাহাদিগকে হত্যা করিতে হইবে।"
(জিয়া উদ্দিন বারাউনী, তারিখ-ই-ফিরোজ শহী, পৃ-২৩৯)
বলা বাহুল্য সম্রাট আলাউদ্দিন এই নীতিতেই ভারত শাসন করতেন।

অন্যদের জানাতে শেয়ার করুন, কোন মন্তব্য করার থাকলে নিচের কমান্ট বক্সে করুন, আপডেট পেতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিয়ে রাখুন ও মুখ ও মুখোশের গ্রুপে জয়েন করুন।
facebook page
facebook grup

এরপর... ইসলাম অথবা মৃত্যু
Powered by Blogger.